বাংলাদেশের কুমিল্লা ও রাজশাহীতে ছোঁয়াচে রোগ ‘স্ক্যাবিস’-এর প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এই দুই মহানগরের সরকারি হাসপাতালগুলোয় খোস-পাঁচড়া জাতীয় এ রোগে আক্রান্ত রোগীর ভিড় বাড়ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
কুমিল্লার মুরাদনগরে সাত বছর বয়সী এক শিশু এই ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর তাকে হাসপাতালে নিতে হয়েছে।
শিশুটির মা আয়শা খানম এই রোগে তার সন্তানের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, “ছোড মাইয়ার (মেয়ে) গত সপ্তাহে প্রথমে জ্বর আসছে, ডাক্তারের কাছে নেই নাই, ওষুধ দিছি। পর দিন দেখি ডান হাতের আঙ্গুলে খালি চুলকায়। আঙ্গুলের চিপায় চিপায় লাল লাল ফোস্কার মতন।”
“তখনও পাত্তা দেই নাই। পরেরদিন দেখি এগুলা ভইরা গেছে শরীরের চিপায় চিপায়। তিন দিনের দিন উপজেলা হেলথ সেন্টারে নিছি। ডাক্তাররা কয় এটা ছোঁয়াচে, সবার থেকে আলাদা রাখন লাগবো মাইয়ারে। ওষুধ দিছে, ক্রিম, লোশন দিছে। সাত দিন চলে এখনও ভালো হয় নাই, ” বলছিলেন আয়শা খানম।
চিকিৎসকরা বলছেন, সাধারণ মানুষ অনেক সময় ‘স্ক্যাবিস’কে খোস-পাঁচড়া বলে উল্লেখ করে।গরমের সময়ে এই ছোঁয়াচে রোগটির প্রাদুর্ভাব বেশি হলেও এখন সারা বছরই দেখা দেয়।
মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা জানান, ‘স্ক্যাবিস’ নামের এ চর্ম রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন গড়ে এ হাসপাতালের বহির্বিভাগে দুইশ থেকে আড়াইশ জন চিকিৎসা নিতে আসেন।
এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আমাদের হাসপাতালের বহির্বিভাগে বয়স্ক ও শিশু মিলিয়ে প্রতিদিন পাঁচশো থেকে সাড়ে পাঁচশো রোগী আসে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে। আর এর মধ্যে শূন্য থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশু রোগীই হয় দেড়’শ থেকে পৌনে দুইশো। তাদের মধ্যে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ স্ক্যাবিসে আক্রান্ত রোগী।”
শুধু কুমিল্লার এই উপজেলাই নয়, এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও।
বিশ্ববিদ্যালয়টির মেডিকেল সেন্টারে গত এক সপ্তাহে দৈনিক গড়ে ৩০ থেকে ৩৫ জন এ চর্ম রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসেন।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও রাজশাহী শহরেও এ রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসক মাশিউল আলম হোসেন।
প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে এই চর্ম রোগ ‘স্ক্যাবিস’ কী ও কীভাবে ছড়ায়? এ রোগের লক্ষণ ও উপসর্গই বা কী?
এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা কী? কীভাবে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়?
চিকিৎসকরা বলছেন, শত শত চর্ম রোগের মধ্যে এই ‘স্ক্যাবিস’ রোগই সবচেয়ে বেশি ছোঁয়াচে।
একজনের দেহ থেকে আরেকজনের দেহে সংক্রমণ দ্রুত হলেও রোগটি প্রতিরোধযোগ্য।
তবে সঠিক চিকিৎসা না হলে স্ক্যাবিসের কারণে কিডনি জটিলতা দেখা দিতে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন চিকিৎসকরা।
ফলে এ রোগে সংক্রমণের হার ঠেকাতে ওই ব্যক্তিরই শুধু নয়, বরং ওই পরিবার বা একই ঘরে অবস্থানকারী সব সদস্যদের একসাথে চিকিৎসা করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।